মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুনদের স্বপ্নভঙ্গের নতুন ভাইরাস। দায়ী কে?

FREELANCING:- মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুনদের স্বপ্নভঙ্গের নতুন ভাইরাস। দায়ী কে?
পুরো লেখাটি না পড়ে, আপনি কখনোই লেখার উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারবেন না। 

আমরা তো সংবাদপত্রে শুধু সফলদের বিজ্ঞাপন দেখি। তাদেরকে অনুপ্রানিত করি। তাদের বাহবা দেই। কিন্তু আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, এই ফ্রিলান্সিং কত ছেলেকে অসহায় করে ফেলেছে? আমি একদম বাস্তববাদী চিন্তাভাবনা করি। তাই একটি বাস্তব বিষয় নিয়ে লিখবো আজ। নিজের দেখা কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবো।

FREELANCING: একটি সন্মানজনক পেশা। অনেক মেধার প্রতিফলন ঘটিয়ে ফ্রিলান্সিং করতে হয়। একটি স্কিল এর সাথে আর একটি স্কিল এমনভাবে জড়িত যে, যারা ফ্রিলান্সিং করে একমাত্র তারাই জানে যে, কত মেধা খাটিয়ে টাকা উপার্জন করতে হয়। যারা ফ্রিলান্সার তারা তো অবশ্যই খুব ভালো করে জানেন যে, যে কেউ এসেই ফ্রিলান্সিং করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করতে হলে অবশ্যই দরকার আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা। তার পরেও আপনি দেখবেন যে, আজকাল বাস এর পেছনে পর্যন্ত দেখা যায় যে, কোন যোগ্যতা ছাড়াই আয় করুন।, ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা ইত্যাদি I হাবিজাবি চাইপের লেখা। তার ফলে কি হচ্ছে, 12-15 হাজার টাকা দিয়ে ট্রেনিং করিয়ে শেষে বিদায়! এমন কি কোন রেকর্ড আছে যে, অন্তত ৫০ ভাগ ও সফল হয়েছে?

 একদম সৎভাবে বলতে গেলে,  ৩০ জন ষ্টুডেন্ট খেকে মাত্র ২ জন সফলভাবে কাজ করতে পারছে। বাকী সব ঝড়ে পড়েছে। আমি তাদের কথাই বলছি যারা ঝড়ে পড়েছে। তাদের কি হবে? তারা তো অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলো মাসে 40-50 হাজার টাকা আয় করতে। অনেকে ধার করে এনেও কোচিং করেছে আমার দেখা মতে। তাদের ধারনা ছিলো যে, ৩ মাস ট্রেনিং করে পরে সুখী LIFE যাপন করবে। বাবা মাকে সুখী করবে। কিন্তু তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে নূন্যতম ধারনাও ছিলো না। অথচ যখন তারা আসলেই পারবে কি না এটি জানতে কোন ট্রেনিং সেন্টারের কনসাল্টেন্সির কাছে যোগাযোগ করছে, তারা বলেছে যে, কোর্স করার পর ১০০% আয় করা যাবে।

তাহলে দোষটা কার? তিন মাস কোর্স করার পর যখন তার স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়, তখন এর জন্য কে দায়ী? আসলে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সে ই দায়ী। এভাবে কত মানুষ ধোকা খাচ্ছে আর কতো মানুষ অসহায় জীবন যাপন করছে তার ইয়ত্তা নেই। আসলে ফ্রিলান্সিং কোন ছেলেখেলা নয়। সফল ফ্রিলান্সারদের জীবন নিয়ে ভেবে দেখবেন তারা কিভাবে সফল হয়েছে। তারা অনেক যোগ্যতার অধিকারী বলেই তারা আজ সফল।

আর যে কেউ চাইলেই কোনদিন সফল হতে পারে না। তার মধ্যে গুন থাকা লাগে। লাগে সীমাহীন ধৈর্য। সহজভাষায় বলতে গেলে যেমন, ক্লাসের সবাই ই প্রথম হয় না তেমন ই সবাই ফ্রিলান্সার হতে পারে না। প্রথম শ্রেনির মেধা ও ধৈর্যসম্পন্ন মানুষগুলোই সফল ফ্রিলান্সার হয়।

তাদের স্বপ্ন দেখাটা কি ভুল হয়েছে তাহলে? আসলে তা নয়। যারা তাদের এ মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছেন তারা ভুল করেছেন। তারা মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছেন। বিনিময়ে আর একটি স্বপ্নময় মানুষকে করছে স্বপ্নভঙ্গ। তাদের কথা তো বাদ ই দিলাম। চিটার বাটপারদের দেশে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতাম যদি সরকার কোন ভালো কাজ করতো। কিন্তু খুব কষ্ঠ লাগে যে, সরকার এই কাজটি আরো ব্যাপকভাবে করছে। একেবারে অনুষ্ঠান করে তরুনদের স্বপ্নভঙ্গ বলা চলে। কোটি কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে দেশে ফ্রিলান্সার বানানোর জন্য। কিন্তু কেউ কি সরকারী ট্রেনিং করে ফ্রিলান্সার হতে পেরেছে? উত্তর হবে না। যদি কেউ পেরেও থাকে তাহলে শতকরা 2-3% হতে পারে। তাহলে কেনো ৫ দিনের ট্রেনিং করিয়ে লক্ষ লক্ষ তরুনদের স্বাবলম্বী করার অপচেষ্ঠা চালিয়ে সরকারী টাকাগুলো অপচয় করা হচ্ছে???
আসলে কিছুই হয় নি। হয়েছে তরুনদের স্বপ্নভঙ্গ। কারন তারা কোথাও বলেনি একমাত্র এক্সট্রা অর্ডিনারিরা ই ফ্রিলার্ন্সি খাতে সফলতা পায়। সবাই কখনোই সফলতা পায় না। আমার সাথে অভিজ্ঞ ফ্রিলান্সাররা একমত হবেন যে, ৮০% যোগ্যতা নিয়েও অনলাইনে আয় স্থায়ীভাবে ধরে রাখা যায় না। স্থায়ীভাবে অনলাইনে আয় ধরে রাখতে হলে দরকার ১০০% দক্ষতা। আর তা না হলে অযথা সময় নষ্ঠ।

সত্যি কথাটা হলো আপনি কম দক্ষতা থাকলে ০০.০০০ টাকাও আয় করতে পারবেন না। আপনাকে 100% SKILLED হতেই হবে। আমি ক্লিয়ার করে বলে দেই যে, অনলাইনে আয় করা যায় শুনেই না লাফিয়ে আগে নিজের অবস্থানটা বুঝুন। আপনি অনলাইনে কাজ করার জন্য উপযুক্ত কি না।  যেখানে একজন ফ্রিলান্সার কে গড়ে ৮ ঘন্টা কম্পিউটার এ বসে থাকতে হয়!
আবার সম্প্রতি এমনও দেখছি যে, অন্যজনের সফলতা দেখে অনেকে ফ্রিলান্সিং কে এতোই সহজ মনে করে যে, তারা ভাবে আমার গ্রামের পোলা যেহেতু টাকা আয় করে সেহেতু আমিও পারবো। কারন তার থেকে আমি ছাত্র হিসাবে অনেক ভালো! আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, প্রথাগত শিক্ষা ও অনলাইন ফ্রিলান্সিং সম্পূর্ন আলাদা জিনিস। তা ভালোমতো বুঝতে হবে। এখানে আগ্রহ ও ধৈর্য হচ্ছে সাফল্যের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
আর কোন নতুন ব্যক্তি যদি তিন মাস শেখার পরে কোনভাবে অনুধাবন করে যে, তাকে দিয়ে ফ্রিলান্সিং করা সম্ভব নয় তবে তার মাঝে যে মানসিক শূন্যতা দেখা দেয়, তা সাড়াজীবন নিয়ে বয়ে বেড়াতে হয়। অনেককে দেখেছি নিরবে বড় স্বপ্ন দেখে পরে চোখের পানি ফেলতে। আবার অনেককে দেখেছি সফল হয়ে সুখের হাসি হাসতে। নিজেকে আগে প্রশ্ন করুন আপনি ফ্রিলান্সিং এর জন্য উপযুক্ত কিনা। নাকি খালি হুজুগে পড়ে ফ্রিলান্সিং করে ঘরে বসে বড়লোক হতে এসেছেন?

মাঝপথে কি হচ্ছে? সরকারদলীয় কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিগন মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আর কিছু তরুন এর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।

পোষ্টটি লেখার উদ্দেশ্য একটাই, সকল নতুনদের মাঝে একটা ম্যাসেজ পৌছিয়ে দেওয়া যে, সবার দ্বার ফ্রিলান্সিং করা সম্ভব নয়। আগে ভাবুন। তার পর স্বপ্ন দেখুন। অন্তত পরে হতাশ হতে হবে না।  


No comments

Powered by Blogger.